চাঁদাবাজি অত্যন্ত ঘৃণিত ও গর্হিত অপরাধ, ভয়ানক দস্যুতা এবং সংঘবদ্ধ সামাজিক মহামারি।
ইসলামের দৃষ্টিতে চাঁদাবাজি সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ। চাঁদাবাজি, এতে সহযোগিতা করা ও নির্দেশ দেওয়া সবই ন্যক্কারজনক মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে দেশের প্রতিটি জনপদ। সামাজিক প্রতিটি সেক্টর ও সব সংস্থায় নতুন নতুন পদ্ধতিতে চাঁদাবাজির আড়ালে চলছে ডাকাতি, দস্যুতা ও বর্বর হত্যা-নির্যাতন। গুটি কয়েক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছাড়া দেশের সব মানুষই তাদের কাছে জিম্মি। পরিবহন সেক্টর, নির্মাণ খাত, ব্যবসাবাণিজ্য, চিকিৎসা খাত, শিক্ষা বিভাগ, আইনি সহায়তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ জনগণ রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজদের বেপরোয়া আচরণে অনেকেই আজ হুমকির সম্মুখীন। ডোনেশন, কালেকশন, সেলামি, কমিশন, টিপস, ফি, বকশিশ, সাহায্য, সম্মানি ইত্যাদি শিরোনামে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ দুর্নীতির ভয়ংকর ফাঁদ। ডাক্তারের সম্মানি বর্তমানে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার চক্রান্তে রোগী ও তাদের অভিভাবকরা বর্তমানে দিশাহারা। প্রাইভেট বিদ্যালয়গুলোতে চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি এবং রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য। প্রতি বছর ভর্তি ফি, সেশন ফি, পোশাক, ইউনিফর্ম, ভ্রমণ ফি, কোচিং এবং আরও যে কত নামে চাঁদবাজি চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, তা দেখার যেন কেউ নেই এ দেশে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তেমন ভেদাভেদও নেই। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এসবই নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করোনা।’ (সুরা বাকারা-১৮৮)।
চাঁদা উত্তোলনকারী, সহায়ক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই ওই পাপের সমান অংশীদার। সবাই অত্যাচারী-জালিমের সহযোগী অথবা সরাসরি জালিম। যারা এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরও এ মহাপাপ থেকে দায়মুক্তির সুযোগ নেই। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার সম্মতি ছাড়া কারও জন্য বৈধ হবে না।’ (দারা কুতনি)। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘অনুমতি ব্যতীত কারও পশু কেউ দোহন করবে না।’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম)।
চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রে চাঁদাবাজরা হুমকিধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, ত্রাস সৃষ্টি করে, হত্যা-খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে- এসবই সামাজিক অভিশাপ। কোরআন-হাদিসে প্রতিটি অপকর্মের জন্য ইহ ও পরকালে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করেছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধাচরণ এবং দেশে সন্ত্রাস-অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে- তাদের হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসিতে ঝোলানো হবে অথবা তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা মায়িদাহ-৩৩)।